এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া সার্জারি
ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া সার্জারির সুবিধা:
- বড় করে পেট কাটতে হয় না, ছিদ্র করে বা ল্যাপারোস্কোপ মেশিনের সাহায্যে করা যায়।
- আগের তুলনায় ব্যথা কম এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।
- রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
- খরচের নির্দিষ্ট প্যাকেজ, সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ।
বড় করে পেট না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে এই অপারেশন করা হয়। একটি ছিদ্র দিয়ে ক্যামরা ঢুকানো হয় এবং অন্যান্য ছিদ্র দিয়ে চিকন যন্ত্রপাতি ঢুকানো হয়। গ্যাস দিয়ে পেট ফুলানো হয়। পেটের ভিতরে গিয়ে অথবা মাংসপেশীর পেছনে গিয়ে এই অপারেশন করা হয়। হার্নিয়ার ছিদ্রটি খুঁজে বের করা হয়, সুতা দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসটাকে সুতা বা ট্যাকার দিয়ে ফিক্স করা হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকবে যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম। অপারেশন শেষ হওয়ার পর পেট থেকে গ্যাস বের করে দেয়া হয় এবং চামড়া সেলাই করা হয়। সাধারনত এই অপারেশন পুরোপুরি অচেতন (জেনারেল এনেসথেসিয়া) দিয়ে করা হয়।
এই পদ্ধতির সুবিধা হল বড় করে পেট কাটতে হয় না, ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।
একেক রোগীর হার্নিয়া একেক রকম হয় এবং কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে করা যায় না। তাছাড়া শারীরিক জটিলতার কারনে কোন রোগীকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়া যায় না। তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
কোন পদ্ধতিতে অপারেশন করলে বেশী ভালো হবে? ওপেন নাকি এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক?
দুটি পদ্ধতি ই ভালো। আবার ও বলছি, দুটি পদ্ধতিই ভালো। দুই পদ্ধতিতেই হার্নিয়া চমৎকারভাবে রিপেয়ার করা যায়।
ওপেন রিপেয়ার পদ্ধতি সার্জনরা বহু বছর ধরে ব্যবহার করছেন এবং বর্তমান সময়ে অত্যাধুনিক টেকনিক ব্যবহার করার কারনে অপারেশনের মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রিকারেন্সও অনেক কম হচ্ছে।
এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি। বড় করে পেট না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে এই অপারেশন করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হল বড় করে পেট কাটতে হয় না, ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়। তবে একেক রোগীর হার্নিয়া একেক রকম হয় এবং কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে করা যায় না।
হার্নিয়ার প্রকারভেদ, সাইজ, অবস্থান ও রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। তাই কোন একটি পদ্ধতি প্রথমেই বাছাই না করে আপনার সার্জনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া সার্জারির সুবিধা অসুবিধা:
দুই পাশে ইনগুইনাল হার্নিয়া থাকলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বেশী ভালো – ওপেন পদ্ধতিতে দুই পাশে পেট কেটে করতে হবে, কিন্তু ল্যাপারোস্কোপি করলে একই ছিদ্র দিয়ে দুই পাশে অপারেশন করা যায়।
রিকারেন্ট হার্নিয়া – যদি আগের অপারেশনটি ওপেন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে, তাহলে এবার এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে করলে ফলাফল ভালো পাওয়া যাবে।
দ্রুতে কাজে ফিরতে পারেন – ছোট ছিদ্র করে অপারেশন করা হয়, তাই রোগীর আরোগ্য দ্রুত হয়।
ব্যথা তুলনামূলক কম।
রিকারেন্স রেট দুই পদ্ধতির প্রায় সমান।
অপারেশনের সময় তুলনামূলক বেশী।
ইনজুরির রিস্ক কিছুটা বেশী
কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপিক মেশিনে করা যায় না।
ওপেন সার্জারির তুলনায় খরচ বেশী।
শতকরা ৫ ভাগ অপারেশন ল্যাপারোস্কোপিক মেশিনের দ্বারা শেষ করা যায় না, সেসব ক্ষেত্রে সার্জনকে ওপেন করে অপারেশন শেষ করতে হয়।
ওপেন হার্নিয়া সার্জারির সুবিধা অসুবিধা:
দ্রুত অপারেশন শেষ করা যায়।
অনেক হার্নিয়া আংশিক অবশ করে করা যায়, যার ফলে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়ার রিস্ক কমানো যায়।
খরচ তুলনামূলক অনেক কম।
কিছু বড় বড় হার্নিয়া ওপেন পদ্ধতিতে করতে হয়।
ইনজুরির রিস্ক কিছুটা কম।
ব্যথা তুলনামূলক বেশী।
রিকারেন্স রেট প্রায় সমান
যদি আগের হার্নিয়ার অপারেশন ল্যাপারোস্কোপিকের মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং রিকারেন্স হয়, তাহলে এবারের অপারেশন ওপেন পদ্ধতিতে করল ফলাফল ভালো পাওয়া যাবে।
সবাই কি ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির জন্য ফিট?
রোগীকে সরাসরি দেখে এবং সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সার্জন এই সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। যদিও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির কিছু সুবিধা রয়েছে কিন্তু এটা সবার জন্য নয়।
যাদের জন্য ল্যাপারোস্কোপি ভালো হবে না –
বড় হার্নিয়া।
দীর্ঘ সময় ধরে অবসট্রাকটেড হার্নিয়া।
আগে তলপেটে বড় ধরনের কোন অপারেশন হয়েছে।
যারা জেনারেল এনেসথেসিয়ার জন্য শারীরিকভাবে ফিট না।
ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া অপারেশনে কি কি কম্প্লিকেশন বা জটিলতা হতে পারে?
যেসব অপারেশন ল্যাপারোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়, সেসব অপারেশন যে সবসময় যন্ত্রের সাহায্যে শেষ করা যাবে তা শতভাগ নিশ্চিত নয়। কারন পেটের ভেতরে ঢোকার পর সার্জন হয়ত এমন কোন জটিলতা দেখতে পান যেটা অপারেশন পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়া সম্ভব ছিল না। তাই যন্ত্রের দ্বারা অপারেশনটি শুরু করা হলেও, রোগীর ভালোর স্বার্থেই সার্জন পেট কেটে অপারেশনটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
পোর্ট ইনফেকশন – ছিদ্রের জায়গা অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধ ও ড্রেসিংএ ভালো হয়ে যায়, কিছু ক্ষেত্রে আপারেশনের প্রয়োজন হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী টিবির ঔষধ খাওয়া লাগতে পারে।
মেস ইনফেকশন
স্পার্মাটিক কর্ড ইনজুরি – রক্তনালী ও ভাস ডিফারেন্স ইনজুরি হতে পারে। অপারেশন চলাকালীন রিপেয়ার বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব যেন কোন ক্ষতি না হয়।
নার্ভ ইনজুরি – দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার কারন হতে পারে।
সেরোমা – শরীরের রস জমে অপারেশনের জায়গা ফুলে যেতে পারে।
পেটের অঙ্গের ইনজুরি – যেমন নাড়িভূড়ি, মূত্রথলি ইত্যাদি। পোর্টের মাধ্যমে বা অপারেশন চলাকালীন সময়ে ইনজুরি হতে পারে। সাধারনত এগুলো অপারেশন চলাকালীন সময়ে রিপেয়ার করে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত অপারেশন – অপারেশন চলাকালীন সময়ে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে যার কারনে অতিরিক্ত বা ভিন্ন ভিন্ন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
আরোগ্য লাভে দেরী – উপরোক্ত কারনে রোগীকে অতিরিক্ত সময় হাসপাতালে অবস্থান করেতে হতে পারে, আরোগ্য লাভে ও কর্মক্ষেত্রে ফেরত যেতে দেরী হতে পারে।
রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া – দক্ষ হাতে এই হার শতকরা ১ ভাগ, ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে। ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে শতকরা ১-৫ ভাগ (মেস ব্যবহার না করলে ৩৩ ভাগ)।
বাংলাদেশ হার্নিয়া সেন্টারে কি আমার ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া সার্জারি করাতে পারব?
হ্যাঁ। ডা. শোভন সাঈদ নিয়িমিতভাবে এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতেই অপারেশন করছেন। আপনাকে সরাসরি দেখার পর আপনার অপারেশন সম্পর্কিত প্ল্যানিং করা হবে।
ঢাকার কয়েকটি নামকরা হাসপাতালে আমাদের সার্জনরা হার্নিয়ার অপারেশন করে থাকেন, যেখানে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার ও সেবা রয়েছে। খরচের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে, আপনার সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী যেকোন একটি প্যাকেজ বেছে নিতে পারেন। এছাড়া সমাজের সুবিধা বঞ্চিত জনগনের জন্য বিশেষ প্যাকজ রয়েছে।