Skip to content

পেটে বিভিন্ন ধরনের হার্নিয়া হয় যেমন, আমবিলিকাল বা নাভির হার্নিয়া, ইনসিশনাল বা অন্য অপারেশন পরবর্তী হার্নিয়া, রিকারেন্ট বা পুনরায় হার্নিয়া, ভেন্ট্রাল হার্নিয়া, এপিগ্যাস্ট্রিক হার্নিয়া, লাম্বার হার্নিয়া, প্যারাস্টোমাল হার্নিয়া ইত্যাদি। পেটের যেকোন হার্নিয়া সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকবে এবং বাইরের দিকে আসতে থাকবে। ধীরে ধীরে এটি ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি করবেন এবং আপনার দৈনন্দিন চলাফেরা ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। অপারেশনই হার্নিয়ার একমাত্র সমাধান।

যদিও অনেক রোগী অপারেশন করতে ভয় পান, কিন্তু আধুনিক সময়ে হার্নিয়ার সার্জারির অনেক উন্নতি হয়েছে, যার ফলে বেশীরভাগ রোগী অপারেশনের একদিন পরেই বাড়ি যেতে পারেন। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশেও হার্নিয়ার অপারেশনের জন্য সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে।

আধুনিক হার্নিয়া অপারেশনের মূল আকর্ষন

  • বড় করে পেট কাটতে হয় না, ছিদ্র করে বা ল্যাপারোস্কোপ মেশিনের সাহায্যে করা যায়।
  • আগের তুলনায় ব্যথা কম এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।
  • রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
  • খরচের নির্দিষ্ট প্যাকেজ, সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ।

পেটের হার্নিয়ার অপারেশন ২ ভাবে করা হয়-

১. ওপেন রিপেয়ার বা পেট কেটে অপারেশন

পেটের চামড়া ও আবরন কেটে হার্নিয়ার ছিদ্রের স্থানটি খুঁজে বের করা হয় এবং ছিদ্র দিয়ে যেসব অঙ্গ বের হয়ে এসেছে সেগুলো আবার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরপর সুতা দিয়ে ছিদ্র সেলাই করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকবে যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম। অপারেশন শেষে চামড়া সেলাই করে দেয়া হয়। এই অপারেশনটি বেশীরভাগক্ষেত্রে আংশিক অবেদন (রিজিওনাল এনেসথেসিয়া) দিয়ে করা হয়, কোমড়ের মেরুদন্ডে একটি ইনজেকশন দেয়া হয়, যার ফলে কোমড় হতে পায়ের নীচ পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। অপারেশন শেষে রোগীকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হবে এবং আনুমানিক ৩ বা ৪ ঘন্টা পর পায়ের অবশভাব কেটে যাবে।

২. এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার বা ছিদ্র করে অপারেশন

বড় করে পেটে না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে এই অপারেশন করা হয়। একটি ছিদ্র দিয়ে ক্যামরা ঢুকানো হয় এবং আরো কয়েকটি ছিদ্র দিয়ে চিকন যন্ত্রপাতি ঢুকানো হয়। পেটের ভিতরে গিয়ে অথবা মাংসপেশীর পেছনে গিয়ে এই অপারেশন করা হয়। এই ক্ষেত্রেও হার্নিয়ার ছিদ্রটি খুঁজে বের করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসটাকে সুতা বা ট্যাকার দিয়ে ফিক্স করা হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকবে যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম। সাধারনতন এই অপারেশন পুরোপুরি অচেতন (জেনারেল এনেসথেসিয়া) দিয়ে করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হল বড় করে পেট কাটতে হয় না, ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।

বর্তমানে সব রিপেয়ারেই মেস ব্যবহার করা হয়। একেক রোগীর হার্নিয়া একেক রকম হয় এবং কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে করা যায় না। তাছাড়া শারীরিক জটিলতার কারনে কোন রোগীকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়া যায় না। তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।

কি ধরনের মেস ব্যবহার করা হয়?

মেস দেখতে অনেকটা জালি বা নেটের মত যা পলিপ্রপাইলিন দিয়ে তৈরী। তলপেট ও কুচকির মাংশপেশীর দূর্বলতার স্থানটি মেস দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং মেসটি স্থায়ীভাবে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকে, যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম থাকে । এই মেসটি আজীবন এভাবেই রোগীর শরীরে রয়ে যাবে এবং জায়গাট শক্তিশালী রাখবে। মেস সহ রিপেয়ার করলে রিকারেন্সের হার শতকরা ১ ভাগ কিন্তু মেস ব্যবহার না করলে এই হার ৩৩ ভাগ। তাই মেস ব্যবহারই এখন আন্তর্জাতিক প্রটোকল।

বিগত প্রায় ৩০ বছর যাবত এই মেস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বর্তমান মেসের কার্যকারিত আগেরকার চেয়ে অনেক ভালো। 

এই মেসগুলো মেডিকেল গ্রেডের, স্টেরাইল এবং বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী করে বানানো হয়। সাধারনত এটি শরীরের সাথে মানিয়ে যায় এবং কোন ধরনের সমস্যা হয় না। তবে খুবই কম ক্ষেত্রে ফরেন বডি রিএ্যকশন হয় এবং কিছু উপসর্গ দেখা যায় যেমন ইনফেকশন, ব্যথা, অস্বস্তি ইত্যাদি। সাধারনত ঔষধেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তবে কখনো কখনো অপারেশন লাগতে পারে। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশ সবচেয়ে আধুনিক মানের মেস ব্যবহার করে থাকে। তবে মেস কয়েক রকমের হয়ে থাকে এবং একেক রোগীর একেক ধরনের মেসের প্রয়োজন হয়, তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন ধরনের মেস রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। আবার বাজারে একটি মেসই কয়েক কোম্পানীর পাওয়া যায়। রোগী তার সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানী বাছাই করতে পারবেন এবং রোগীর বাছাইকৃত কোম্পানীর মেসই তার শরীরে বসানো হবে।

পেটের হার্নিয়া অপারেশনে কি কি কম্প্লিকেশন বা জটিলতা হতে পারে?

যেকোন অপারেশনে কম্প্লিকেশন বা জটিলতা হতে পারে, হার্নিয়া অপারেশনও এর ব্যতিক্রম নয়। সব রোগীরই কম্প্লিকেশন হবে এমন কিন্তু নয় এবং পরিসংখ্যানে দেখা যায় এসব কম্প্লিকেশন হওয়ার হার খুবই কম এবং সার্জন ও তার টিমও সর্বদা সচেষ্ট থাকেন এসব কম্প্লিকেশন পরিহার করে সুষ্ঠভাবে অপারেশনটি শেষ করতে। কিন্তু সব রোগীর শারীরিক ফিটনেস একরকম নয় এবং মানবদেহের কিছু কিছু বিষয় সার্জন টিমের নিয়ন্ত্রনাধীন না, তাই সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্প্লিকেশন এড়ানো যায় না।  এই ব্যপারগুলো মেনে নিয়ে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই অপারেশনে যেতে হয়।

“এবং আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন তিনিই আমাকে সুস্থ করে তোলেন।” (২৬-সূরা আশ শোয়ারা আয়াত-৮০)

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের আধুনিক দেশ এবং বড় বড় সেন্টারেও কম্প্লিকেশন হয়ে থাকে। কিন্তু স্পেশালাইজড হার্নিয়া সেন্টার বা দক্ষ হাতে এসব কম্প্লিকেশনের হার তুলনামূলক কম। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশের সার্জনদের কম্প্লিকেশনের হারও কম, যা আন্তর্জাতিক কম্প্লিকেশন মানের সমতুল্য । তারপরও, এই কম্প্লিকেশনগুলো জেনে বুঝে এবং পরিপূর্নভাবে মেনে নিয়েই রোগীকে অপারেশনে যেতে হয়। কারন কোন রোগীর কম্প্লিকেশন হলে সেটা ঔ রোগীর জন্য ১০০ ভাগ।

অপারেশন সম্পর্কিত জটিলতা:

ইনফেকশন – চামড়ার ইনফেকশন, মেস ইনফেকশন, সিস্টেমিক ইনফেকশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধ ও ড্রেসিংএ ভালো হয়ে যায়, কিছু ক্ষেত্রে আপারেশনের প্রয়োজন হয়।

নার্ভ ইনজুরি – এর কারনে চমড়ার অসাড়তা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধে ভালো হয়ে যায়।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা – মেসের কারনে এই ব্যথা হতে পারে। ঔষধে চিকিৎসা সম্ভব।

পেটের অঙ্গের ইনজুরি – যেমন নাড়িভূড়ি, মূত্রথলি ইত্যাদি। অপারেশন চলাকালীন রিপেয়ার করা হয়। 

অতিরিক্ত অপারেশন – অপারেশন চলাকালীন সময়ে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে যার কারনে অতিরিক্ত বা ভিন্ন ভিন্ন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

আরোগ্য লাভে দেরী – উপরোক্ত কারনে রোগীকে অতিরিক্ত সময় হাসপাতালে অবস্থান করেতে হতে পারে, আরোগ্য লাভে ও কর্মক্ষেত্রে ফেরত যেতে দেরী হতে পারে।

রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া – দক্ষ হাতে এই হার শতকরা ১ ভাগ, মেস ব্যবহার না করলে ৩৩ ভাগ। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির রিকারেন্সের হারও কম।

এনেসথেসিয়া বা অবেদন সম্পর্কিত জটিলতা:

যদিও আধুনিক এনেসথেসিয়া প্রক্রিয়া যথেষ্ট নিরাপদ কিন্তু তারপরও কিছু জটিলতা মাঝেমধ্যে হতে পারে-

এনেসথেসিয়া ঔষধের রিএ্যকশন বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া

রিভার্স বা আরোগ্য প্রক্রিয়ায় সমস্যা – যার কারনে রোগীকে আই.সি.ইউ তে যেতে হতে পারে।

হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসে সমস্যা – অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্ট ফেইলিওর, শ্বাসক্রিয়ার জটিলতা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি যার চিকিৎসার জন্য সি.সি.ইউ বা আই.সি.ইউ তে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।

যন্ত্রপাতি বা ল্যাপারোস্কোপিক মেশিন সম্পর্কিত জটিলতা:

যেসব অপারেশন ল্যাপারোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়, সেসব অপারেশন যে সবসময় যন্ত্রের সাহায্যে শেষ করা যাবে তা শতভাগ নিশ্চিত নয়। কারন পেটের ভেতরে ঢোকার পর সার্জন হয়ত এমন কোন জটিলতা দেখতে পান যেটা অপারেশন পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়া সম্ভব ছিল না। তাই যন্ত্রের দ্বারা অপারেশনটি শুরু করা হলেও, রোগীর ভালোর স্বার্থেই সার্জন পেট কেটে অপারেশনটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশ হার্নিয়া সেন্টারে কি আমার পেটের হার্নিয়ার অপারেশন করাতে পারব?

হ্যাঁ। ডা. শোভন সাঈদ নিয়িমিতভাবেই ওপেন ও এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক, দুই পদ্ধতিতেই অপারেশন করছেন। আপনাকে সরাসরি দেখার পর আপনার অপারেশন সম্পর্কিত প্ল্যানিং করা হবে। ঢাকার কয়েকটি নামকরা হাসপাতালে আমাদের সার্জনরা হার্নিয়ার অপারেশন করে থাকেন, যেখানে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার ও সেবা রয়েছে। খরচের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে, আপনার সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী যেকোন একটি প্যাকেজ বেছে নিতে পারেন। এছাড়া সমাজের সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের জন্য বিশেষ প্যাকজ রয়েছে।

কিভাবে বুঝব যে আমার পেটের হার্নিয়া আছে?

পেটের কোন একটি জায়গা ফুলে যাওয়া হার্নিয়ার লক্ষন। কিন্তু সব ফোলাই হার্নিয়া নয়। সাধারনত দাঁড়ালে বা জোড়ে কাশি দিলে হার্নিয়ার জায়গাটা ফুলে যায় এবং শুয়ে পড়লে বা হার্নিয়া জায়গাটা হাত দিয়ে চাপ দিলে জায়গাটা সমান হয়ে যায় বা ফোলা কমে যায়। এই হার্নিয়া বড় হয়ে গেলে, নাড়িভূড়ি চামড়ার নীচে চলে আসে।

অন্যান্য বিভিন্ন কারনে শরীরে ফোলা হতে পারে যেমন – লিম্ফ নোড, লাইপোমা, টিউমার ইত্যাদি।

শরীরের কোন জায়গা ফুলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তররা রোগীকে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে রোগটা নির্নয় করতে পারেন এবং আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।

অপারেশনের আগে কি কি প্রস্তুতি নিতে হবে?

প্রথম কাজটি হচ্ছে সার্জনের এপয়েন্টমেন্ট নেয়া। সার্জন ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনাকে দেখে রোগ নির্ণয় করবেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিবেন, প্রি এনেসথেটিক চেকআপ করা হবে, আপনার জন্য সর্ব্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হবে এবং অপারেশনের তারিখ দেয়া হবে।

ব্যক্তিগত চেম্বারে সার্জনকে দেখানো  – রোগীর সাথে একজন অভিভাবক চেম্বারে প্রবেশ করতে পারবেন। সার্জনের সাথে আপনার উপসর্গগুলো নিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আলাদা একটি স্থানে রোগীকে পরীক্ষা বা এক্সামিনেশন করা হবে। একজন মহিলা কর্মী বা নার্সের উপস্থিতিতে মহিলা রোগীদের পরীক্ষা করা হয় এবং উক্ত সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয় যেনো রোগীর পর্দা নষ্ট না হয়। পরীক্ষা বা এক্সামিনেশন করার পর সার্জন আপনার রোগ নিয়ে কথা বলবেন ও প্রাথমিকভাবে একটি চিকিৎসাপদ্ধতি ঠিক করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিবেন।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো – হার্নিয়া রোগ ও এর ব্যপ্তি আরো সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য কিছু ইমেজিং পরীক্ষা দেয়া হবে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যান। অপারেশন এবং এনেসথেসিয়ার ধকল সহ্য করার জন্য রোগীর শরীর ফিট বা প্রস্তুত আছে কিনা তা দেখার জন্য বেশ কিছু ল্যাবরেটরি ও ইমেজিং পরীক্ষা দেয়া হবে যেমন রক্ত, ইউরিন, বুকের এক্সরে, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি ইত্যাদি। এগুলো ঐদিন বা আপনার সময়মত করে ফেলবেন। পরীক্ষার রিপোর্টগুলো নিয়ে আবার সার্জনের সাথে দেখা করবেন। 

প্রি এনেসথেটিক চেক আপ –  পরীক্ষার রিপোর্টসহ সেন্টারে আসলে প্রথমেই একজন এনেসথেসিওলোজিস্ট ডাক্তার আপনাকে দেখে এই চেকআপটি সম্পন্ন করবেন এবং সিদ্ধান্ত দিবেন অপারেশনটি আপনার জন্য কতটা নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ন। এরপর আপনাকে সার্জনের চেম্বারে পাঠানো হবে।

সর্ব্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা – প্রত্যেক রোগীর শারীরিক গঠন ও রোগ আলাদা আলাদা। তাই সার্জন আপনার সকল রেকর্ড পর্যালোচনা করে  যেটা আপনার জন্য বেস্ট হবে সেই অপারেশনের সিদ্ধান্তটি দিবেন এবং আপনার অভিভাবকদের সাথে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করবেন। অন্য আর কি কি অপশন বা উপায় আছে সেটাও জানানো হবে। আপনি, আপনার অভিভাবক ও সার্জনের যৌথ সম্মতিতে অপারেশন প্ল্যান চুড়ান্ত হবে এবং উভয়পক্ষ সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করবেন। 

অপারেশনের প্যাকজ ও তারিখ নির্ধারন করা – ঢাকার তিনটি হাসপাতালে আমাদের সার্জনরা অপারেশন করে থাকেন। হাসপাতাল ও কেবিনের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্যাকজে রয়েছে।  আপনার সুবিধা অনুযায়ী জন্য যে কোন একটি প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন। এই ব্যাপারে আমাদের সেন্টারের ম্যানেজার আপনাকে সাহায্য করবেন।

নির্দিষ্ট কিছু বার এবং সময়ে আমাদের সার্জনরা অপারেশন করে থাকেন। অপারেশনের সিডিউল ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে আপনাকে সবচেয়ে কাছাকাছি একটি তারিখ দেয়া হবে। হাসপাতালের ঠিকানা, অপারেশনের তারিখ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তারিখ ও সময় সবকিছু আপনাকে লিখে দেয়া হবে। সব কাগজ সহ, সময় অনুযায়ী উক্ত হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হবেন। যেকোন প্রয়োজনে আমাদের হটলাইনে যোগাযোগ করবেন।

অপারেশনর দিনের প্রস্তুতি

যেদিন অপারেশন হবে সাধারনত ঐদিন হাসপাতালে ভর্তি হবেন। সময়টা আগেই জানিয়ে দেয়া হবে। অপারেশনের পর সাধারনত ১ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। অপারেশনের ৮ ঘন্টা আগে হতে কিছু খাওয়া যাবে না, এমনকি পানিও না (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন)। হাসপাতালে আসার আগে সাবান দিয়ে গোসল করবেন। হাসপাতালে আসার সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ, এক্সরে, সিটিস্ক্যান ফিল্ম, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সহ সকল ডকুমেন্টস নিয়ে আসবেন। শরীরে কোন অলংকার পরা থাকলে সেটা খুলে ফেলতে হবে যেমন আংটি, তাবিজ, কানের দুল, চুড়ি, ব্রেসলেট, নাকফুল ইত্যাদি। মহিলাদের চুলগুলো বেনী করতে হবে। নার্স আপনাকে এসব ব্যপারে সাহায্য করবেন। যেস্থানে অপারেশন করা হবে সেই স্থানে এবং তার আশে পাশের স্থানের চামড়ার লোম শেভ করা হবে। আপনার যেই পাশে হার্নিয়া বা যেই স্থানে হার্নিয়া সেখানে মার্কার কলম দিয়ে দাগ দেয়া হবে। আপনি সচেতনভাবে লক্ষ্য করবেন সঠিক জায়গায় বা সঠিক পাশে দাগ দেয়া হচ্ছে কিনা। ব্যপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। 

আপনি ব্লাড প্রেসারের ঔষধ নিয়মিত খেয়ে থাকলে অপারেশনের আগ পর্যন্ত সময় ‍অনুযায়ী অল্প পানি দিয়ে খাবেন। এসপিরিন (ইকোস্প্রিন) বা ক্লোপিডগরেল জাতীয় ঔষধ অপারেশনের ৫ দিন আগে থেকে বন্ধ রাখতে হবে। সকল প্রকার ঔষধের ব্যপারে আগে থেকেই আপনাকে পরিষ্কার ধারনা দিয়ে দেয়া হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালের কর্মীরা আপনাকে অপারেশন থিয়েটারের নিয়ে যাবে। ওখানে সার্জনের সাথে আপনার দেখা হবে। সার্জনের সাথে কথা বলার পর পরই আপনাকে অবেদন করা হবে এবং অপারেশন শুরু হবে। 

অপারেশনের পর কি কি হতে পারে?

অপারেশন শেষ হবার পর পরই রোগীর জ্ঞান ফিরানো হবে এবং পোস্ট অপারেটিভ রুমে নেয়া হবে। রোগীর বর্তমান অবস্থা ও অপারেশন কেমন হল, ইত্যাদি ব্যাপারে রোগীর একজন অভিভাবককে জানানো হবে। পোস্ট অপারেটিভ রুমে রোগীকে প্রয়োজন অনুসারে ব্যথানাশক ও ঘুমের ঔষধ দেয়া হয়, যেন রোগী কোন ধরনের কষ্ট না পায়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়, সময়টা একেক রোগীর জন্য একেক রকম হতে পারে। পোস্ট অপারেটেভ রুমের ডাক্তার যখন নিরাপদ মনে করবেন তখন রোগীকে কেবিনে পাঠাবেন। পোস্ট অপারেটিভ রুমে আপনি সার্বক্ষনিক ডাক্তার, নার্স ও সহায়তাকারীদের সাহায্য পাবেন।

ঘুম ভাঙ্গার পর পর ই আপনি আপনার সুবিধামত নড়াচড়া করতে পারবেন। উঠে বসবেন, লম্বা লম্বা শ্বাস নিবেন, হাটবেন। দাঁত ব্রাশ করবেন, ঠোঁটে ভেসলিন লাগাবেন। কিছুটা ব্যাথা থাকবে কয়েকদিন। ব্যথার জন্য ঔষধ খেতে দেয়া হবে এবং ব্যথা বেশী হলে সাপোজিটরী দেয়া হবে।

সাধারনত অপারেশনের পর ৬ ঘন্টা পর্যন্ত কিছু খাওয়া যায় না। মুখ শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে গড়গড়া করতে পারেন। ৬ ঘন্টা পর লিকুইড জাতীয় খাবার খাওয়া যায় যেমন পানি, ডাবের পানি, শরবত, ফলের জুস, ক্লিয়ার স্যুপ ইত্যাদি। এসব খাবারে কোন সমস্যা না হলে আপনি অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার আস্তে আস্তে খেতে পারবেন।  

সাধারনত হার্নিয়া অপারেশনের ২ দিন পর ছুটি দেয়া হয়।

অপারেশনের ৭ দিন পর সার্জনের চেম্বারে দেখা করতে হবে ড্রেসিং ও সেলাই কাটার জন্য।

সাধারনত ১ সপ্তাহ বা ক্ষেত্র বিশেষে ২ সপ্তাহ পর কাজে যোগদান করা যায়।

বাসায় থাকাকালীন অবস্থায় পরামর্শ

স্বাভাবিক হাঁটা-চলা করবেন। স্বাভাবিক সকল খাবার খেতে পারবেন।

ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্য নিয়মিত ঔষধ সেবন করে থাকলে, সেগুলো আগের নিয়ম মত চলবে। কিন্তু এসপিরিন (ইকোস্প্রিন) বা ক্লোপিডগরেল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না।   

দিনে ৩ লিটার পানি পান করবেন।

শাকসবজি ও ফলমূল বেশী করে খাবেন। 

ভারী ওজন বহন করবেন না।

গোসল করতে পারবেন – বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ দেয়া হয় যেটা পানিতে ভেজালেও সমস্যা হয় না।

যদি ড্রেন টিউব দেয়া থাকে – ড্রেন টিউবের ব্যাগের রস প্রতিদিন সকালে ফেলে দিবেন এবং ফেলা দেয়া রসের পরিমান লিখে রাখবেন। পদ্ধতিটি আপনাকে শিখিয়ে দেয়া হবে।

সামান্য ব্যথা, সামান্য জ্বর, এক বা দুই বার বমি ইত্যাদি উপসর্গ স্বাভাবিক, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

সেসব উপসর্গ দেখলে দ্রুত সেন্টারে যোগাযোগ করবেন – কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর, বার বার বমি, পেটে অসহ্য ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা, ব্যান্ডেজ ভিজে রস গড়িয়ে পড়া ইত্যাদি।

আপারেশন করার পর আবারও কি হার্নিয়া হতে পারে?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সারা বিশ্বেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পরে আবার হার্নিয়া হয় বা রিকারেন্স হয়,প্রায় শতকরা ১০ভাগ। তবে গবেষনায় দেখা গিয়েছে, স্পেশালাইজড্ হার্নিয়া সেন্টারে এবং দক্ষ হাতে রিকারেন্স কম হয়। দক্ষ হাতে এই হার শতকরা ১ ভাগ। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির রিকারেন্সের হারও কম।

অপারেশনই কি হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা?

অপারেশনই হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা। অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া কখনো নির্মূল হবেনা। তবে কিছু রোগীর নানাবিধ শারীরিক জটিলতার কারনে অপারেশনের রিস্ক, হার্নিয়ার রিস্কের চেয়ে বেশী হয়, সেসব ক্ষেত্রে অপারেশন না করাই শ্রেয়। সেসব ক্ষেত্রে ‘সতর্কতার সাথে অপেক্ষা’ নীতি অবলম্বন করা যায়। ভারী কাজ পরিহার করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী কাশি ও কোষ্টকাঠিন্যের চিকিৎসা করতে হবে। যদি হার্নিয়ার ব্যথা বা ফুলা বেড়ে যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে রিস্ক নিয়ে হলেও অপারেশন করতে হতে পারে।

অপারেশন না করলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

হার্নিয়া অপারেশন না করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, যে কোন সময় ইমার্জেন্সি অবস্থার তৈরি হতে পারে, যেমন তীব্র ব্যথা, বমি, নাড়িভূড়ি আটকে যাওয়া (অবস্ট্রাকশন), নাড়িভূড়ির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্ট্র্যাংগুলেশন), নাড়িভূড়ি পঁচে যাওয়া ইত্যাদি। তখন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জরুরী অপারেশন ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় অপারেশন করলে ফলাফল যতটা ভাল হবে, ইমার্জেন্সি অপারেশেনর ফলাফল ততটা ভাল নাও হতে পারে এবং কম্প্লিকেশন হবার সম্ভবনাও বেশী থাকে। তাছাড়া রোগী যদি তখন বিদেশ সফরে থাকে বা অফিসিয়াল কোন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়।

সহজ কথায়, যদি আপনার হার্নিয়া থেকে থাকে, নিয়মিত ব্যথা হয় এবং দৈনন্দিন চলাচলে সমস্যা হয় এবং আপনি শারীরিকভাবে ফিট আছেন, তাহলে খুব দ্রুতই অপারেশন করানো উচিত কারন হার্নিয়া যেকোন সময় জটিলতা বা ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা আপনাকে মারাত্মক বিপদে ফেলতে পারে।