অপারেশন পরবর্তী কম্প্লিকেশন বা জটিলতা
যেকোন অপারেশনের পর কম্প্লিকেশন বা জটিলতা হতে পারে, হার্নিয়া অপারেশনও এর ব্যতিক্রম নয়। সব রোগীরই কম্প্লিকেশন হবে এমন কিন্তু নয় এবং পরিসংখ্যানে দেখা যায় এসব কম্প্লিকেশন হওয়ার হার খুবই কম এবং সার্জন ও তার টিমও সর্বদা সচেষ্ট থাকেন এসব কম্প্লিকেশন পরিহার করে সুষ্ঠভাবে অপারেশনটি শেষ করতে। কিন্তু সব রোগীর শারীরিক ফিটনেস একরকম নয় এবং মানবদেহের কিছু কিছু বিষয় সার্জন টিমের নিয়ন্ত্রনাধীন না, তাই সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্প্লিকেশন পরিহার করা সম্ভব হয় না। এই ব্যপারগুলো মেনে নিয়ে এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখেই অপারেশনে যেতে হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের আধুনিক দেশ এবং বড় বড় সেন্টারেও কম্প্লিকেশন হয়ে থাকে। কিন্তু স্পেশালাইজড হার্নিয়া সেন্টার বা দক্ষ হাতে কম্প্লিকেশনের হার তুলনামূলক কম। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশের সার্জনদেরও কম্প্লিকেশনের হার কম, যা আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য ।
অপারেশন সম্পর্কিত জটিলতা:
ইনফেকশন – চামড়ার ইনফেকশন, মেস ইনফেকশন, সিস্টেমিক ইনফেকশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধ ও ড্রেসিংএ ভালো হয়ে যায়, কিছু ক্ষেত্রে আপারেশনের প্রয়োজন হয়।
নার্ভ ইনজুরি – এর কারনে চমড়ার অসাড়তা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধে ভালো হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা – মেসের কারনে এই ব্যথা হতে পারে। ঔষধে চিকিৎসা সম্ভব।
স্পার্মাটিক কর্ড ইনজুরি – রক্তনালী ও ভাস ডিফারেন্স ইনজুরি হতে পারে। অপারেশন চলাকালীন রিপেয়ার বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব যেন কোন ক্ষতি না হয়।
পেটের অঙ্গের ইনজুরি – যেমন নাড়িভূড়ি, মূত্রথলি ইত্যাদি। অপারেশন চলাকালীন বা পরবর্তীতে রিপেয়ার করা হয়।
অতিরিক্ত অপারেশন – অপারেশন চলাকালীন সময়ে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে যার কারনে অতিরিক্ত বা ভিন্ন ভিন্ন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
আরোগ্য লাভে দেরী – উপরোক্ত কারনে রোগীকে অতিরিক্ত সময় হাসপাতালে অবস্থান করেতে হতে পারে, আরোগ্য লাভে ও কর্মক্ষেত্রে ফেরত যেতে দেরী হতে পারে।
রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া – দক্ষ হাতে এই হার শতকরা ১ ভাগ, ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে। ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে শতকরা ১-৫ ভাগ (মেস ব্যবহার না করলে ৩৩ ভাগ)। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির রিকারেন্সের হারও কম।
এনেসথেসিয়া বা অবেদন সম্পর্কিত জটিলতা:
যদিও আধুনিক এনেসথেসিয়া প্রক্রিয়া যথেষ্ট নিরাপদ কিন্তু তারপরও কিছু জটিলতা মাঝেমধ্যে হতে পারে-
এনেসথেসিয়া ঔষধের রিএ্যকশন বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া
রিভার্স বা আরোগ্য প্রক্রিয়ায় সমস্যা – যার কারনে রোগীকে আই.সি.ইউ তে যেতে হতে পারে।
হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসে সমস্যা – অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্ট ফেইলিওর, শ্বাসক্রিয়ার জটিলতা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি যার চিকিৎসার জন্য সি.সি.ইউ বা আই.সি.ইউ তে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
যন্ত্রপাতি বা ল্যাপারোস্কোপিক মেশিন সম্পর্কিত জটিলতা:
যেসব অপারেশন ল্যাপারোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়, সেসব অপারেশন যে সবসময় যন্ত্রের সাহায্যে শেষ করা যাবে তা শতভাগ নিশ্চিত নয়। কারন পেটের ভেতরে ঢোকার পর সার্জন হয়ত এমন কোন জটিলতা দেখতে পান যেটা অপারেশন পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়া সম্ভব ছিল না। তাই যন্ত্রের দ্বারা অপারেশনটি শুরু করা হলেও, রোগীর ভালোর স্বার্থেই সার্জন পেট কেটে অপারেশনটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।