Skip to content

আধুনিক হার্নিয়া অপারেশনের মূল আকর্ষন

  • বড় করে পেট কাটতে হয় না, ছিদ্র করে বা ল্যাপারোস্কোপ মেশিনের সাহায্যে করা যায়।
  • আগের তুলনায় ব্যথা কম এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।
  • রিকারেন্স বা পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
  • খরচের নির্দিষ্ট প্যাকেজ, সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ।

অনেকেই জানেন না যে, বিগত কয়েক বছরে হার্নিয়ার অপারেশন অনেক অনেক বদলে গিয়েছে। আগের পদ্ধতির সাথে নতুন এবং উন্নত পদ্ধতি যোগ হয়েছে যার মাধ্যমে আরো সূক্ষভাবে অপারেশনটি করা যাচ্ছে এবং রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হচ্ছে। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশে সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে হার্নিয়ার অপারেশন করা হয়।

যেকোন হার্নিয়া সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকবে। অপারেশনই এর একমাত্র চিকিৎসা। হার্নিয়া আপনার দৈনন্দিন স্বাভাবিক চলাফেরা ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে

কিছু কিছু রোগীর নানাবিধ শারীরিক জটিলতার কারনে অপারেশেনর ঝুঁকি অনেক বেশী থাকে এবং অপারেশন সময়কালীন জীবনের ঝুঁকি থাকে, সেসব ক্ষেত্রে রোগীদের অপারেশনে না যাওয়াই শ্রেয়।

হার্নিয়া অপারেশন দুই ভাবে করা যায়-

১. ওপেন রিপেয়ার বা পেট কেটে অপারেশন

পেটের চামড়া ও আবরন কেটে হার্নিয়ার ছিদ্রের স্থানটি খুঁজে বের করা হয় এবং ছিদ্র দিয়ে যেসব অঙ্গ বের হয়ে এসেছে সেগুলো আবার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরপর সুতা দিয়ে ছিদ্র সেলাই করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকবে যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম। বেশীরভাগ হার্নিয়া পুরোপুরি অবেদন (জেনারেল এনেসথেসিয়া) বা আংশিক অবেদন (রিজিওনাল এনেসথেসিয়া) দিয়ে করা হয়।

২. এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার বা ছিদ্র করে অপারেশন

বড় করে পেট না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে এই অপারেশন করা হয়। একটি ছিদ্র দিয়ে ক্যামরা ঢুকানো হয় এবং অন্যান্য ছিদ্র দিয়ে চিকন যন্ত্রপাতি ঢুকানো হয়। পেটের ভিতরে গিয়ে অথবা পেটের মাংসপেশীর পেছনে গিয়ে এই অপারেশন করা হয়। এই ক্ষেত্রেও হার্নিয়ার ছিদ্রটি খুঁজে বের করা হয় এবং সুতা দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসটাকে সুতা বা ট্যাকার দিয়ে ফিক্স করা হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকবে যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম। সাধারনতন এই অপারেশন পুরোপুরি অবেদন (জেনারেল এনেসথেসিয়া) দিয়ে করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হল বড় করে পেট কাটতে হয় না, ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়।

বর্তমানে সব রিপেয়ারেই মেস ব্যবহার করা হয়। একেক রোগীর হার্নিয়া একেক রকম হয় এবং কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে করা যায় না। তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।

ইনগুইনাল বা কুচকির হার্নিয়ার অপারেশন

যদিও অনেক রোগী অপারেশন করতে ভয় পান, কিন্তু আধুনিক সময়ে হার্নিয়ার সার্জারির অনেক উন্নতি হয়েছে, যার ফলে বেশীরভাগ রোগী অপারেশনের একদিন পরেই বাড়ি যেতে পারেন।

পেটের হার্নিয়ার (আমবিলিকাল) অপারেশন

পেটে বিভিন্ন ধরনের হার্নিয়া হয় যেমন আমবিলিকার বা নাভির হার্নিয়া, ইনিসিশনাল বা অন্য অপারেশন পরবর্তী হার্নিয়া, এপিগ্যাস্ট্রিক হার্নিয়া ইত্যাদি।

রিকারেন্ট বা পুনরায় হার্নিয়ার অপারেশন

রিকারেন্ট হার্নিয়া টেকনিক্যালি খুবই চ্যালেন্জিং ও কঠিন অপারেশন এবং কম্লিকেশন হবার সম্ভবনাও বেশী থাকে।  রিকারেন্ট হার্নিয়া হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ০.৫% হতে ১৫%।

এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া সার্জারি

বড় করে পেট কাটতে হয় না, ছিদ্র করে বা ল্যাপারোস্কোপ মেশিনের সাহায্যে করা যায়। ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয় ও কাজে যোগদান করতে পারেন।

মেস (MESH)

মেস দেখতে অনেকটা জালি বা নেটের মত যা পলিপ্রপাইলিন দিয়ে তৈরী। যেই স্থানের মাংশপেশীর দূর্বলতার কারনে হার্নিয়া হয় সেই স্থানে মেস দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং মেসটি স্থায়ীভাবে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকে, যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম থাকে । এই মেসটি আজীবন এভাবেই রোগীর শরীরে রয়ে যাবে এবং জায়গাটি শক্তিশালী রাখবে। মেস সহ রিপেয়ার করলে রিকারেন্সের হার শতকরা ১ ভাগ, ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে এবং ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে শতকরা ১-৫ ভাগ। কিন্তু মেস ব্যবহার না করলে এই হার ৩৩ ভাগ। তাই মেস ব্যবহারই এখন আন্তর্জাতিক প্রটোকল।

বিগত প্রায় ৩০ বছর যাবত এই মেস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এখন আরো উন্নতমানের মেস ব্যবহার করা হয় যার কার্যকারিত আগেরকার চেয়ে ভালো। 

এই মেসগুলো মেডিকেল গ্রেডের, স্টেরাইল এবং বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী করে বানানো হয়। সাধারনত এটি শরীরের সাথে মানিয়ে যায় এবং কোন ধরনের সমস্যা হয় না। তবে খুবই কম ক্ষেত্রে ফরেন বডি রিএ্যকশন হয় এবং কিছু উপসর্গ দেখা যায় যেমন ইনফেকশন, ব্যথা, অস্বস্তি ইত্যাদি। সাধারনত ঔষধেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তবে কখনো কখনো অপারেশন লাগতে পারে। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশ সবচেয়ে আধুনিক মানের মেস ব্যবহার করে থাকে। তবে মেস কয়েক রকমের হয়ে থাকে এবং একেক রোগীর একেক ধরনের মেসের প্রয়োজন হয়, তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন ধরনের মেস রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। আবার বাজারে একটি মেসই কয়েক কোম্পানীর পাওয়া যায়। রোগী তার সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানী বাছাই করতে পারবেন এবং রোগীর বাছাইকৃত কোম্পানীর মেসই তার শরীরে বসানো হবে। 

অপারেশন করার পর আবারও কি হার্নিয়া হতে পারে?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সারা বিশ্বেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পরে আবার হার্নিয়া হয় বা রিকারেন্স হয়,প্রায় শতকরা ১০ভাগ। তবে গবেষনায় দেখা গিয়েছে, স্পেশালাইজড্ হার্নিয়া সেন্টারে এবং দক্ষ হাতে রিকারেন্স কম হয়। দক্ষ হাতে এই হার শতকরা ১ ভাগ, ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে। ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে শতকরা ১-৫ ভাগ। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির রিকারেন্সের হারও কম।

অপারেশনই কি হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা?

অপারেশনই হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা। অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া কখনো নির্মূল হবেনা। তবে কিছু রোগীর নানাবিধ শারীরিক জটিলতার কারনে অপারেশনের রিস্ক, হার্নিয়ার রিস্কের চেয়ে বেশী হয়, সেসব ক্ষেত্রে অপারেশন না করাই শ্রেয়। সেসব ক্ষেত্রে ‘সতর্কতার সাথে অপেক্ষা’ নীতি অবলম্বন করা যায়। ভারী কাজ পরিহার করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী কাশি ও কোষ্টকাঠিন্যের চিকিৎসা করতে হবে। যদি হার্নিয়ার ব্যথা বা ফুলা বেড়ে যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে রিস্ক নিয়ে হলেও অপারেশন করা লাগতে পারে।

অপারেশন না করলে কি কি সমস্যা হতে পারে?
  • দৈনন্দিন কাজে ব্যঘাত সৃষ্টি করবে
  • দিনে দিনে বড় হবে
  • জরুরী পরিস্থিতি তৈরী করবে

হার্নিয়া অপারেশন না করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, যে কোন সময় ইমার্জেন্সি অবস্থার তৈরি হতে পারে, যেমন তীব্র ব্যথা, বমি, নাড়িভূড়ি আটকে যাওয়া (অবস্ট্রাকশন), নাড়িভূড়ির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্ট্র্যাংগুলেশন), নাড়িভূড়ি পঁচে যাওয়া ইত্যাদি। তখন জরুরী অপারেশন ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় অপারেশন করলে ফলাফল যতটা ভাল হতে পারত, ইমার্জেন্সি অপারেশেনর ফলাফল ততটা ভাল নাও হতে পারে এবং কম্প্লিকেশন হবার সম্ভবনাও বেশী থাকে। তাছাড়া রোগী যদি তখন বিদেশ সফরে বা অফিসিয়াল কোন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকেন, তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে।

সহজ কথায়, যদি আপনার হার্নিয়া থেকে থাকে, নিয়মিত ব্যথা হয়, দৈনন্দিন চলাচলে সমস্যা হয় এবং আপনি শারীরিকভাবে ফিট আছেন, তাহলে খুব দ্রুতই অপারেশন করানো উচিত কারন হার্নিয়া যেকোন সময় জটিলতা বা ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা আপনাকে মারাত্মক বিপদে ফেলতে পারে।