Skip to content
হার্নিয়া কি?

আমাদের পেট একটি থলি বা ব্যাগের মত। মাংসপেশী ও চামড়া দিয়ে এই ব্যাগটা তৈরি আর এই ব্যাগের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেমন নাড়িভূড়ি, মূত্রথলি ইত্যাদি । এই মাংসপেশীর কোন একটি জায়গা দূর্বল বা ছিদ্র হয়ে গেলে উক্ত ছিদ্র দিয়ে পেটের ভেতরের অঙ্গ বাহিরে চলে আসে, মাংসপেশী ও চামড়ার মধ্যবর্তী স্থানে। সাধারনত জোড়ে কাশি দিলে অঙ্গগুলো চামড়ার নীচে চলে আসে এবং জায়গাটা ফুলে যায়। ফোলা জায়গাটা হাত দিয়ে চাপ দিলে অঙ্গগুলো আবার পেটের ভিতর চলে যায় এবং ফোলা জায়গাটা সমান হয়ে যায়। এটাকেই হার্নিয়া বলে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, দাড়ালে বা জোড়ে কাশি দিলে পেটের দেয়ালের কোন অংশ যদি ফুলে ওঠে এবং শুয়ে পড়লে বা হাত দিয়ে চাপ দিলে যদি ফোলাটা কমে যায় তাহলে এটা হার্নিয়া।

শুধু পেটেই হার্নিয়া হয় তা নয়, শরীরের অন্য জায়গাতেও হার্নিয়া হতে পারে। তবে পেটেই বেশি হয়।

সাধারনত কুচকিতেই হার্নিয়া বেশি হয়ে থাকে। কুচকির মাংসপেশী ভেদ করে নাড়িভূড়ি অন্ডথলিতে চলে আসে এবং অন্ডথলি ফুলে বড় হয়ে যায়।

কিছু হার্নিয়া জন্মগতভাবেই থাকে, আর কিছু হার্নিয়া সময়ের সাথে দেখা দেয়।

হার্নিয়ার উপসর্গ কি?

ফুলে যাওয়া

ব্যথা – ব্যথা সাধারনত সহ্যের মধ্যেই থাকে তবে ভারী কাজ বা ব্যয়াম করলে ব্যথা বেড়ে যায়।

জ্বালা-যন্ত্রনা করা

ভারী ভারী লাগা

পেটের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়া

এই উপসর্গগুলোই রোগীরা নিজের ভাষায় বলেন, যেমন-

আমার কুচকিতে চামড়ার নীচে ফোলা আছে

পরিশ্রম করার পর আমার কুচকি টাইট হয়ে আসে

ব্যাথার কারনে হাঁটা বন্ধ করে দিতে হয়

আমি জগিং করতে পারি, কিন্তু বলে কিক করতে অনেক কষ্ট হয়

যখন দৌড়াই, তখন কুচকিতে অন্যরকম অনুভূতি হয়।

যখন জোড়ে দৌড়াই, তখন অনেক কষ্ট হয়।

ভারী জিনিস ওঠানোর পর, হার্নিয়াটা অনেকক্ষন ব্যথা করে।

কি কি কারনে কুচকির হার্নিয়া হয়?
  • বংশগত (ফার্স্ট ডিগ্রী রিলেটিভ যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এর হার্নিয়া রোগ থাকলে, হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে)।
  • পুরুষদের ৮ গুন বেশী হার্নিয়া হয়, মহিলাদের তুলনায়।
  • হার্নিয়া সবচেয়ে বেশী হয় ৫ বছর বয়সে এবং ৭০-৮০ বছর বয়সে।
  • কোলাজেন মেটাবলিজমে তারতম্য হলে।
  • প্রস্টেট অপারেশন হয়ে থাকলে।
  • ওজন কম হলে।
  • এক পাশে হার্নিয়া থাকলে।
  • কালো জাতি/বর্ণ এর লোকদের হার্নিয়া কম হয়।
  • দীর্ঘদিনের কোষ্টকাঠিন্য।
  • ভারী ওজন ওঠানো।
  • ফুসফুসের সমস্যা – দীর্ঘদীনের কাশি, সিওপিডি রোগ।
হার্নিয়া কোথায় কোথায় হয়?  

কুচকি ও অন্ডকোষ, নাভি, উপরের পেটে, তল পেটে, পেটের দুই পাশে, পেটে আগের অন্য কোন অপারেশনের জায়গায়, পেটের স্টোমার পাশে ইত্যাদি। কোথায় হার্নিয়া হয়েছে সাধারনত সেই অনুসারেই হার্নিয়ার নামকরন করা হয়।

যেসব হার্নিয়া বেশী হয়:

ইনগুইনাল বা কুচকির হার্নিয়া (Inguinal Hernia) – কুচকির মাংসপেশী ভেদ করে নাড়িভূড়ি অন্ডথলিতে চলে আসে এবং অন্ডথলি ফুলে বড় হয়ে যায়। এক বা দুই কুচকিতেই হতে পারে।

আমবিলিকাল বা নাভির হার্নিয়া (Umbilical Hernia) – নাভি বা এর আশেপাশের জায়গা দূর্বল হয়ে এই হার্নিয়া হয়।

ইনিসিশনাল বা  অন্য অপারেশন পরবর্তী হার্নিয়া (Incisional Hernia) – পেটে অন্য কোন অপারেশনের ক্ষতস্থান দূর্বল হয়ে এই হার্নিয়া তৈরি করে।

রিকারেন্ট বা পুনরায় হার্নিয়া (Recurrent Hernia) – একবার হার্নিয়া অপারেশনের পর, পুনরায় যদি একই জায়গায় হার্নিয়া হয়।

পেডিয়েট্রিক বা বাচ্চাদের হার্নিয়া (Pediatric Hernia) – বড়দের যেসব হার্নিয়া হয়, শিশুদেরও সেসব হার্নিয়া হতে পারে। তবে ইনগুইনাল বা কুচকির হার্নিয়া এবং আমবিলিকাল বা নাভির হার্নিয়াই সবচেয়ে বেশী হয়।

যেসব হার্নিয়া কম হয়:

ফিমোরাল হার্নিয়া (Femoral Hernia)- এটাও কুচকিতে হয়।

লাম্বার হার্নিয়া (Lumbar Hernia) – পেটের পাশের (ডান বা বাম) মাংসপেশী দূর্বল হয়ে এই হার্নিয়া হয়।

প্যারাস্টোমাল হার্নিয়া (Parastomal Hernia)– স্টোমার আশে পাশে এই হার্নিয়া হয়।

স্পাইজেলিয়ান হার্নিয়া (Spigelian Hernia) – পেটের দুই পাশে হতে পারে ।

ডায়াফ্রাগমেটিক হার্নিয়া (Diaphragmatic Hernia) – ডায়াফ্রামের জন্মগত ত্রুটির কারনে এই হার্নিয়া হয়।

হায়াটাস হার্নিয়া (Hiatus Hernia) – পেটের ভেতরের হার্নিয়া, ডায়াফ্রামের ছিদ্র দিয়ে পাকস্থলী উপরের দিকে উঠে আসে।

এপিগ্যাস্ট্রিক হার্নিয়া (Epigastric Hernia) – পেটের উপরেরভাগে হয়।

মাসল হার্নিয়া (Muscle Hernia) – হাত বা পায়ের মাংশপেশীতে এ ধরনের হার্নিয়া হয়ে থাকে।

ডায়াসটেসিস রেকটি (Diastasis recti or Divarication recti) – পেটের মধ্যবর্তী স্থান, উপরের পেট হতে তলপেট পর্যন্ত ফুলে বড় হয়ে যায়, লিনিয়া ‍এলবার দূর্বলতার কারনে।

হার্নিয়ার ভেতরে কি থাকে?

পেটের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং পেটের ভেতরকার আবরন বা পেরিটোনিয়াম।

অঙ্গের মধ্যে রয়েছে – নাড়িভূড়ি বা ইনটেসটাইন, চর্বি বা ওমেনটাম, মূত্রথলি বা ইউরিনারি ব্লাডার ইত্যাদি। এই অঙ্গগুলো পেটে থাকে। কিন্তু পেটের মাংসপেশী দূর্বল বা ছিদ্র হয়ে গেলে যে কোন একটি অঙ্গ বা অঙ্গগুলো তাদের আবরন বা পেরিটোনিয়াম সহ, ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে চামড়ার নীচে চলে আসে। হাত দিয়ে চাপ দিলে অঙ্গগুলো আবার পেটের ভিতর চলে যায়। 

তবে অনেক সময় মাংসপেশীর ছিদ্র টাইট হয়ে গেলে নাড়িভূড়িগুলো আটকে যায় এবং চাপ দিলেও আর পেটের ভিতর যায় না। এটা একটি ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি যাকে ইররিডিওসিবল হার্নিয়া বলে। তখন রোগীর তীব্র ব্যথা ও  বমি হতে পারে এবং জরুরী অপারেশন লাগতে পারে।

আমার শরীরের ফোলা জায়গাটা যে হার্নিয়া সেটা কিভাবে নিশ্চিত হব?

শরীরের কোন জায়গা ফুলে যাওয়া হার্নিয়ার লক্ষন। কিন্তু সব ফোলাই হার্নিয়া নয়। সাধারনত দাঁড়ালে বা জোড়ে কাশি দিলে হার্নিয়ার জায়গাটা ফুলে যায় এবং শুয়ে পড়লে বা হার্নিয়ার জায়গাটা হাত দিয়ে চাপ দিলে জায়গাটা সমান হয়ে যায় বা ফোলা কমে যায়। অন্যান্য বিভিন্ন কারনে শরীরে ফোলা হতে পারে যেমন – লিম্ফ নোড, স্যাফেনা ভ্যারিক্স, হাইড্রোসিল, ভ্যারিকোসিল, এপিডিডাইমাল সিস্ট, লাইপোমা, টিউমার ইত্যাদি।

শরীরের কোন জায়গা ফুলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তররা রোগীকে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে রোগটা নির্নয় করতে পারেন এবং আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করে থাকেন।

আমার কুচকিতে ব্যাথা হয়। এটা কি হার্নিয়া লক্ষন?

হার্নিয়ার মূল লক্ষন হচ্ছে ফুলে যাওয়া ও ব্যথা। অনেক সময় হার্নিয়া খুব ছোট হলে রোগীর হাতে ফুলাটা ধরা পরে না, তখন ব্যথাটাই একমাত্র উপসর্গ হয়। তবে অন্যান্য আরো কয়েকটি কারনে কুচকিতে ব্যথা হতে পারে,যেমন – এডাকটর টেনডিনাইটিস, গ্রোইন স্ট্রেইন, অসটাইটিস পিউবিস, হিপ জয়েন্টের অসটিওআরথ্রাইটিস, ব্যাক এর রেফারড্ পেইন ইত্যাদি।

হাইড্রোসিল ও কুচকির হার্নিয়া কি একই রোগ?

না। হাইড্রোসিল রোগটি অন্ডকোষের রোগ। পুরুষের অন্ডকোষ বা বীচির পর্দার মধ্যে পানি জমে পুরো অন্ডকোষটি বড় হয়ে যায়, এটাকে হাইড্রোসিল বলে। শুয়ে পড়লে এই ফোলা কমে যাবে না।

কিন্তু হার্নিয়া রোগটি অন্ডকোষের রোগ নয়, এটি পেটের মাংসপেশীর দূর্বলতার রোগ। কুচকির দূর্বল মাংসপেশী ভেদ করে পেটের নাড়িভূড়ি অন্ডথলিতে চলে আসে এবং শুয়ে পড়লে নাড়িভূড়ি আবারও পেটের ভিতর চলে যায়। অর্থাৎ, কুচকির হার্নিয়া রোগেও অন্ডথলি ফুলবে কিন্তু শুয়ে পড়লে বা হাতে দিয়ে চাপ দিলে ফোলাটা কমে যাবে। 

কুচকির হার্নিয়া কি দুই পাশেই হয়?

ইনগুইনাল হার্নিয়া একপাশে বা উভয়পাশে হতে পারে। রোগীরা সাধারনত এক পাশের হার্নিয়া নিয়ে আসলেও, ডাক্তার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য পাশেও ছোট হার্নিয়ার উপস্থিতি পান, যেটা রোগীর চোখে ধরা পড়েনি।

হার্নিয়া কি বংশগত রোগ?

সাম্প্রতিক কিছু গবেষনায় দেখা গিয়েছে, ফার্স্ট ডিগ্রী রিলেটিভদের (বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে) হার্নিয়া রোগ থাকলে, হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে বাবা-মায়ের হার্নিয়া থাকলে ছেলে-মেয়ের হার্নিয়া হবেই এমন নয়। ওজন, ফিটনেস ও শারীরিক গঠনও হার্নিয়ার জন্য দায়ী যা একেক ব্যক্তির একেক রকম হয়ে থাকে।

কিছু হার্নিয়া জন্মগতভাবেই থাকে, আর কিছু হার্নিয়া সময়ের সাথে দেখা দেয়।

কি কি কারনে পেটের হার্নিয়া (ইনসিশনাল / আমবিলিকাল) হয়?
  • কোলাজেন মেটাবলিজমে তারতম্য।
  • অতিরিক্ত ওজন।
  • বেশী বয়স।
  • পুরুষদের বেশী হয়, মহিলাদের তুলনায়।
  • ধুমপান।
  • দীর্ঘদিনের কোষ্টকাঠিন্য।
  • ভারী ওজন ওঠানো।
  • ফুসফুসের সমস্যা – দীর্ঘদীনের কাশি, সিওপিডি রোগ
  • আগের অপারেশনে ইনফেকশন, সার্জিক্যাল টেকনিক বা কম্প্লিকেশন হলে।
আমার বাচ্চার ইনগুইনাল হার্নিয়া আছে। এই ছোট বয়সেই কি অপারেশন করানো উচিত?

বাচ্চাদের হার্নিয়া কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। হার্নিয়া কোন কারনে আটকে গেলে, বাচ্চারা খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসার জন্য খুব অল্প সময় পাওয়া যায়। ‍বাচ্চাদের ইনগুইনাল হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন। তাই সুবিধামত সময়ে সার্জনের পরামর্শমত দ্রত অপারেশন করে নেয়া উচিত, না হলে বাচ্চার শারীরিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। হার্নিয়ার সাথে সাথে বাচ্চার অন্ডকোষ সঠিক স্থানে আছে কিনা সেটাও দেখা জরুরী এবং আপনার সার্জন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

হার্নিয়া কি এমনি এমনি ভালো হয়ে যেতে পারে?

এই সম্ভবনা একদম নেই বললেই চলে।

আমার হার্নিয়াটা আজ হঠাৎ করেই ভিতরে যাচ্ছে না এবং প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। কি করতে পারি?

আপনি সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। ইনগুইনাল হার্নিয়া হলে দুই হাঁটু ভাজ করুন। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে হার্নিয়ার উপর আস্তে আস্তে চাপ দিন। ঠান্ডা সেক দিতে পারেন। পেটের ভেতর চলে গেলে ব্যথা কমে যবে। যদি এত কাজ না হয়, তাহলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যান। সাধারনত ৬ ঘন্টার বেশী সময় ধরে হার্নিয়া আটকে থাকলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে।

হার্নিয়া কি ইরেকশন বা যৌন সক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে?

সাধারনত বড় ও ব্যথাযুক্ত হার্নিয়া ইরেকশনে প্রভাব ফেলতে পারে। কারন, ব্যথা অবস্থায় পরিপূর্ন ইরেকশন সম্ভব নয় এবং রোগীর যৌন সক্ষমতায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

হার্নিয়া দেখা দিলে কি কি নিয়ম মেনে চলা উচিত?
  • ভারী ওজন বহন করবেন না।
  • পেটে চাপ পড়ে এমন কাজ করা যাবে না।
  • ভারী ব্যয়াম করা যাবে না।
  • দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকবেন না।
  • কাশি হলে চিকিৎসা নিবেন।
  • ধুমপান বন্ধ করুন।
  • দ্রুত হার্নিয়া সার্জনের পরামর্শ নিন।
ট্রাস বা বেল্ট ব্যবহার কি অপারেশনের বিকল্প?

ট্রাস বিশেষ ধরনের বেল্ট, যা হার্নিয়ার উপরে চাপ দিয়ে পড়া হয় যেন হার্নিয়াটা বাইরে বের হয়ে না আসে। আগের দিনে এটা বহুল ব্যবহৃত ছিল কিন্তু গবেষনায় দেখা গিয়েছে এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী হয়। কারন কয়েকটি –

এটি ব্যবহারে হার্নিয়া নির্মূল হয়ে যাবে না কারন হার্নিয়ার মূলে হচ্ছে পেটের মাংসপেশীর দুর্বলতা বা ছিদ্র হয়ে যাওয়া। অপারেশনের মাধ্যমে এই দুর্বলতা রিপেয়ার বা মেরামত করা হয়। কিন্তু ট্রাস শুধুমাত্র হার্নিয়াটাকে চাপ দিয়ে রাখে, মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে না। 

হার্নিয়া তার স্বাভাবিক নিয়মে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে, কারন দিন যত যাবে মাংসপেশী ততই দূর্বল হবে, ছিদ্র আরো বড় হবে, হার্নিয়াও বড় হবে। ট্রাস ব্যাবহার করেও এই বড় হওয়া রোধ করা যায় না, তাই যারা ট্রাস ব্যবহার করেন তারা সাধারনত বড় হার্নিয়া নিয়ে আসেন, যা অপারেশন করতে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়ে যায়। ট্রাস ব্যবহার হয়ত সাময়িক ব্যথা থেকে মুক্তি দিবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার জটিলতার সৃষ্টি করে।

সব হার্নিয়াই কি অপারেশন করতে হয়?

অপারেশনই হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা। অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া কখনো নির্মূল হবেনা বরং দিনে দিনে বড় হতে থাকবে। তবে কিছু রোগীর নানাবিধ শারীরিক জটিলতার কারনে অপারেশনের রিস্ক বেশী হয়, সেসব ক্ষেত্রে অপারেশন না করাই শ্রেয়।

হার্নিয়া অপারেশন না করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, যে কোন সময় ইমার্জেন্সি অবস্থার তৈরি হতে পারে, যেমন তীব্র ব্যথা, বমি, নাড়িভূড়ি আটকে যাওয়া (অবস্ট্রাকশন), নাড়িভূড়ির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্ট্র্যাংগুলেশন), নাড়িভূড়ি পঁচে যাওয়া ইত্যাদি। তখন জরুরী অপারেশন ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় অপারেশন করলে ফলাফল যতটা ভাল হতে পারত, ইমার্জেন্সি অপারেশেনর ফলাফল ততটা ভাল নাও হতে পারে এবং কম্প্লিকেশন হবার সম্ভবনাও বেশী থাকে। তাছাড়া রোগী যদি তখন বিদেশ সফরে বা অফিসিয়াল কোন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকেন, তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে।

সহজ কথায়, যদি আপনার হার্নিয়া থেকে থাকে, নিয়মিত ব্যথা হয়, দৈনন্দিন চলাচলে সমস্যা হয় এবং আপনি শারীরিকভাবে ফিট আছেন, তাহলে খুব দ্রুতই অপারেশন করানো উচিত কারন হার্নিয়া যেকোন সময় জটিলতা বা ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা আপনাকে মারাত্মক বিপদে ফেলতে পারে।

আমার কি খুব দ্রুত অপারেশন করানো উচিত?

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথাই হার্নিয়ার মূল উপসর্গ। তাই অনেক রোগী ব্যথা সহ্য করে সময় পার করেন। কিন্তু অনেক সময় আপনাকে মারাত্মক বিপদে ফেলতে পারে এবং  ইমার্জেন্সি অবস্থার তৈরি হতে পারে, যেমন তীব্র ব্যথা, বমি, নাড়িভূড়ি আটকে যাওয়া (অবস্ট্রাকশন), নাড়িভূড়ির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্ট্র্যাংগুলেশন), নাড়িভূড়ি পঁচে যাওয়া ইত্যাদি। তাই সার্জনরা সব সময় এই উপদেশই দেন যে, হার্নিয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা না করে, ভালো সার্জনের হাতে ও ভালো সেন্টারে, নিজের সুবিধামত সময়ে দ্রুত অপারেশনটি করে নিন।

হার্নিয়া না হওয়ার জন্য আমি কি কি করতে পারি?

দূর্ভাগ্যবশত, হার্নিয়া এমন একটি রোগ যেটা রোধ করার উপায় রোগীর হাতে নেই। কারন বংশগত, লিঙ্গ, বয়স, কোলাজেনের তারতম্য ইত্যাদি নানা কারনে হার্নিয়া হয়, যা নিয়ন্ত্রনের বাইরে। তবে কিছু কিছু উপদেশ মেনে চললে হার্নিয়া হয়ত নাও হতে পারে। যেমন- শরীরের ওজন বা বিএমআই নিয়ন্ত্রনে রাখা, ভারী ওজন সঠিক নিয়মে উত্তোলন করা, কোষ্টকাঠিন্য হতে না দেয়া, কাশি যেন দীর্ঘসময় না থাকে, ধুমপান না করা ইত্যাদি। কোষ্টকাঠিন্য দূর করার জন্য পানি, শাকসবজি, ইসুবগুলের ভূষি, পাঁকা পেঁপে, বেল, আপেল, কলা, গাজর, তিসি ইত্যাদি খাবেন।

আগে হার্নিয়া অপারেশন করেছিলাম কিন্তু এটা আবার হয়েছে। কি করা যায়?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সারা বিশ্বেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পরে আবার হার্নিয়া হয় বা রিকারেন্স হয়। তবে গবেষনায় দেখা গিয়েছে, স্পেশালাইজড্ হার্নিয়া সেন্টারে এবং দক্ষ সার্জনের হাতে রিকারেন্স কম হয়।

রিকারেন্স হলে অপারেশনই এর সমাধান। আশার কথা এখন এই অপারেশনগুলো ল্যাপারোস্কোপিক মেশিনের সাহায্যে করা হয়, যার মাধ্যমে পেটের মাংসপেশীর পেছনের দিকে গিয়ে অপারেশনটি করা হয়। আগের আপারেশনের কারনে পেটের সামনে দিকের মাংসপেশী ফাইব্রোজড্ হয়ে যায় এবং সামনের দিক দিয়ে রিপেয়ার করতে কষ্ট হয়। কিন্তু ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে পেছনের মাংসপেশীর সম্পূর্ন নতুন টিস্যুর উপরে কাজ করা হয় এবং চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে অপারেশন পরবর্তী ব্যথা অনেক কম হয় এবং দ্রুত আরোগ্য হয়।

আমি কি হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশে আমার রিকারেন্ট হার্নিয়ার অপারেশন করাতে পারব?

হ্যাঁ। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশের সার্জনরা প্রতিবছর এধরনের অনেক অপারেশন করে থাকেন এবং তারা ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে অভিজ্ঞ। প্রত্যেক রোগীর শারীরিক অবস্থা ও হার্নিয়ার প্রকারভেদ ভিন্ন ভিন্ন। সার্জন আপনাকে দেখার পর সিদ্ধান্ত দিবেন কোন পদ্ধতিতে অপারেশন করলে আপনার জন্য ফলাফল সবচেয়ে ভালো হবে।

আমার হার্নিয়াটা বর্তমানে কোন মেজর সমস্যা করছে না। আমি কি এখনই অপারেশন করে ফেলব নাকি সমস্যা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব?

সহজ কথায়, কোন প্রকার ঔষধ, বেল্ট  বা এমনি এমনি হার্নিয়া ভালো হয়ে যাবে না। দিন যত যাবে এটা ততই বড় হতে থাকবে এবং জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় অপারেশন করলে ফলাফল যতটা ভাল হবে, মেজর সমস্যা তৈরি হওয়ার পর অপারেশন করলে ফলাফল ততটা ভাল নাও হতে পারে এবং কম্প্লিকেশন হবার সম্ভবনাও বেশী থাকে। আমাদের পরামর্শ থাকবে, যদি আপনি শারীরিকভাবে ফিট থাকেন তাহলে দ্রুতই আপনার হার্নিয়ার অপারেশন করে নিন।

মেস (MESH) কি?

মেস (MESH) দেখতে অনেকটা জালি বা নেটের মত যা পলিপ্রপাইলিন দিয়ে তৈরী। যেই স্থানের মাংশপেশীর দূর্বলতার কারনে হার্নিয়া হয় সেই স্থানে মেস দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং মেসটি স্থায়ীভাবে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয়। মেসের মধ্যে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু জন্মাতে থাকবে এবং মেস সংলগ্ন মাংসপেশীগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকে, যার কারনে পুনরায় হার্নিয়া বা রিকারেন্স হবার সম্ভবনা কম থাকে । এই মেসটি আজীবন এভাবেই রোগীর শরীরে রয়ে যাবে এবং জায়গাট শক্তিশালী রাখবে। মেস সহ রিপেয়ার করলে রিকারেন্সের হার শতকরা ১ ভাগ, ইনগুইনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে এবং ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে শতকরা ১-৫ ভাগ। কিন্তু মেস ব্যবহার না করলে এই হার শতকরা ৩৩ ভাগ। তাই মেস ব্যবহারই এখন আন্তর্জাতিক প্রটোকল।

বিগত প্রায় ৩০ বছর যাবত এই মেস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এখন আরো উন্নতমানের মেস ব্যবহার করা হয় যার কার্যকারিত আগেরকার চেয়ে ভালো। 

এই মেসগুলো মেডিকেল গ্রেডের এবং বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী করে বানানো হয়। সাধারনত এগুলো শরীরের সাথে মানিয়ে যায় এবং কোন ধরনের সমস্যা হয় না। তবে খুবই কম ক্ষেত্রে ফরেন বডি রিএ্যকশন হয় এবং কিছু উপসর্গ দেখা যায় যেমন ইনফেকশন, ব্যথা, অস্বস্তি ইত্যাদি। সাধারনত ঔষধেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তবে কখনো কখনো অপারেশন লাগতে পারে। হার্নিয়া সেন্টার বাংলাদেশ সবচেয়ে আধুনিক মানের মেস ব্যবহার করে থাকে। একেক রোগীর একেক ধরনের মেসের প্রয়োজন হয়, তাই রোগীকে সরাসরি দেখার পর সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন মেসটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে এবং রোগীর সাথে আলোচনা করে মেসের ব্যপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কোন পদ্ধতিতে অপারেশন করলে বেশী ভালো হবে? ওপেন নাকি এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক?

দুটি পদ্ধতি-ই ভালো। আবার ও বলছি, দুটি পদ্ধতিই ভালো। দুই পদ্ধতিতেই হার্নিয়া চমৎকারভাবে রিপেয়ার করা যায়।

ওপেন রিপেয়ার পদ্ধতি সার্জনরা বহু বছর ধরে ব্যবহার করছেন এবং বর্তমান সময়ে অত্যাধুনিক টেকনিক ব্যবহার করার কারনে অপারেশনের মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রিকারেন্সও অনেক কম হচ্ছে।

এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি। বড় করে পেট না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে এই অপারেশন করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হল বড় করে পেট কাটতে হয় না, ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়। তবে একেক রোগীর হার্নিয়া একেক রকম হয় এবং কিছু কিছু বড় হার্নিয়া ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে করা যায় না।

হার্নিয়ার প্রকারভেদ, সাইজ, অবস্থান ও রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সার্জন সিদ্ধান্ত দেন কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। তাই কোন একটি পদ্ধতি প্রথমেই বাছাই না করে আপনার সার্জনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

অপারেশনের সময় কি ধরনের এনেসথেসিয়া বা অবেদন ব্যবহার করা হয়?

সাধারনত ইনগুইনাল হার্নিয়ার ওপেন রিপেয়ারের ক্ষেত্রে আংশিক অবশ (স্পাইনাল) দেয়া হয়। ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন অবশ বা জেনারেল এনেথেসিয়া দেয়া হয়। তবে সব রোগীকেই জেনারেল এনেথেসিয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়।

আমবিলিকাল বা ইনসিশনাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে সাধারনত সম্পূর্ন অবশ বা জেনারেল এনেথেসিয়া দেয়া হয়। 

হার্নিয়ার অপারেশন সাধারনত কারা করে থাকেন? কার হাতে অপারেশন করলে সবচেয়ে ভালো হবে?

যে কোন জেনারেল সার্জনই হার্নিয়ার অপারেশন করে থাকেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী যেকোন সার্জন দক্ষতার সাথে হার্নিয়া অপারেশন করে থাকেন। আপনার হার্নিয়ার অপারেশনটি শুধুমাত্র বিশেষায়িত হার্নিয়া সেন্টারে বা হার্নিয়া সার্জন দিয়ে করাতে হবে এমন কোন কথা নেই। 

তবে সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গিয়েছে, যেসব সার্জনরা শুধুমাত্র হার্নিয়া নিয়ে কাজ করেন তাদের হাতে রিকারেন্স রেট কম বা পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভবনা কম। তাছাড়া হার্নিয়া-সার্জনরা বড় ও জটিল হার্নিয়াগুলো ভালো ম্যানেজ করতে পারেন, কারন এই অপারেশনগুলো কিছু বিশেষ টেকনিক বা প্রক্রিয়ায় করতে হয়, যা আয়ত্ব করা সময়সাপেক্ষ ও অভিজ্ঞতালব্ধ।